দুই দল পাড়ি দিচ্ছে ভিন্ন পথ। এক দল আছে জয়ের ধারায়, আরেক দল বন্দী পরাজয়ের বৃত্তে। চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামেও কাল দিনজুড়েই থাকল সেই আবহ।
আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ–ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিন ম্যাচ টি–টোয়েন্টি সিরিজের আগে দুই অধিনায়কের মুখেও সেই সুর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের শাই হোপ অতীত ভুলতে চাইলেন, বাংলাদেশের লিটন দাস চাইলেন আগের সিরিজগুলোর চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ নিতে।
একসময় টি–টোয়েন্টিতে প্রতাপশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখন এই সংস্করণে একরকম নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে। হেরেছে সর্বশেষ ৭টি টি–টোয়েন্টি সিরিজেই (মাঝে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এক ম্যাচ জিতেছে। সেটি তিন ম্যাচের সিরিজ হলেও প্রথম দুটি ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে গেছে)। যার মধ্যে আছে গত বছর নিজেদের দেশে বাংলাদেশের বিপক্ষে ধবলধোলাই হওয়াও। কিন্তু দলটির জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে সর্বশেষ সিরিজটিই—শারজায় তারা হেরেছে নেপালের কাছেও।
উল্টো পথে থাকা বাংলাদেশ টি–টোয়েন্টিতে ছন্দের খোঁজে ছিল লম্বা সময়। তবে এ বছরের জুলাই থেকে এই সংস্করণে বদলে যাওয়ার বার্তা দিচ্ছে তারা। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ নামবে টানা পঞ্চম সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে।
জয়–পরাজয়ের বাইরেও অনেক প্রাপ্তি আছে বাংলাদেশের। ব্যাটসম্যানরা সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকিয়েছেন, অন্তত ৫ ম্যাচ খেলা হয়েছে এমন পঞ্জিকাবর্ষে ব্যাট করছেন সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটেও।
এই সিরিজে বাড়তি স্বস্তি অধিনায়ক লিটনের ফেরা। এশিয়া কাপে পাঁজরের চোট পাওয়ার পর ছিটকে যাওয়া লিটন দাস খেলতে পারেননি আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজেও। অধিনায়কত্ব পেয়ে পরপর দুই সিরিজে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরেছিল লিটনের দল। তবে এরপরই তিনি দলটাকে গুছিয়ে এনেছেন বলেই মনে হচ্ছে।
সেই কাজটা আরও ভালোভাবে করার জন্য লিটনের হাতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে বিশ্বকাপের আগে আছে ৬ ম্যাচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর নভেম্বরেই দেশের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজ। এই দুই সিরিজে দলের কাছে তাঁর চাওয়া কী?
এই প্রশ্নের উত্তরে কাল লিটন বলেছেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি চাই আমাদের খেলোয়াড়েরা যেন খুব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। সেটা ব্যাটিংয়ে হতে পারে, বোলিংয়ে হতে পারে। আমি চাই যে বোলাররা যখন বল করবে, তারা যেন চাপের মধ্যে থাকে। যে জিনিসগুলো ভবিষ্যতে আমাদের অনেকটাই সাহায্য করবে।’
বাংলাদেশের সামনে এই সিরিজে সুযোগ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে জয়–পরাজয়ের ব্যবধানটাও নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার। এখন পর্যন্ত ১৯ ম্যাচ মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশের জয় ৮টিতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে ৯ ম্যাচ। বাংলাদেশ এগিয়ে গেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য তা হবে বড় অস্বস্তি।
ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক শাই হোপ স্বাভাবিকভাবেই টানা ৭ সিরিজ হারের স্মৃতি ভুলে যেতে চাইছেন, ‘যতবার আপনি মাঠে ঢুকবেন, ম্যাচ জিতবেন—এই বিশ্বাস নিয়েই যেতে হবে। আমি শুধু এটাই বলতে চাই, অতীতকে পেছনে ফেলতে হবে। অতীত থেকে শিখতে হবে, অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে হবে, আর আপনি যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে যাবেন, তখন বিশ্বাস করতে হবে যে প্রতিপক্ষকে হারাতে পারবেন।’
দুই দলের ব্যাটসম্যানরাই শেষ পর্যন্ত তফাত গড়ে দিতে পারেন এই সিরিজে। লিটন ফেরায় টপ অর্ডারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে আরও। সাইফ হাসানের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধনে দেখা যেতে পারে তানজিদ হাসানকে। চট্টগ্রামের ঘাসে ঢাকা উইকেটে আসল কাজটাও করতে হবে ব্যাটসম্যানদেরই।
সর্বশেষ কয়েকটি সিরিজে জিতলেও বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা হয়েছে মিডল অর্ডারের ব্যাটিং। টপ অর্ডার ভালো শুরু এনে দিলেও কেউই সেভাবে পরের দিকে দলের হাল ধরতে পারেননি।
সিরিজের আগে এই দুশ্চিন্তা লিটন দূরে সরিয়ে রাখতে চাইলেন এভাবে, ‘কোনো সিরিজে দেখবেন টপ অর্ডার ভালো করবে না। তখন মনে হবে যে টপ অর্ডারে গ্যাপ। কোনো সিরিজে দেখবেন মিডল অর্ডার খারাপ করছে, মনে হবে যে মিডল অর্ডারে গ্যাপ হচ্ছে কি না।’
এরপরই যদিও লিটন বলেছেন, মিডল অর্ডারের এই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁরাও। সেই ছাপ যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই দেখতে চাইবেন লিটন, তা বোধ হয় না বললেও চলছে।
শুধু মিডল অর্ডার কেন, এই সিরিজে সব জায়গায়ই যেন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন তাঁর দলের ক্রিকেটাররা—এমন চাওয়ার কথা তো জানিয়েই দিয়েছেন তিনি। বড় স্বপ্ন অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করে দেওয়া লিটন ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হতে চান ঘরের মাঠের এই সিরিজটি দিয়েই। দূরদেশে আসা হোপ অবশ্য তাকিয়ে শুধুই সিরিজ জয়ের দিকে।
          
            






























আপনার মতামত লিখুন :